বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন
গৌরনদী প্রতিনিধি॥ শ্বশুরবাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ওড়না ও শরীরের চামড়ার কিছু অংশ পাওয়ার তিনদিন পর একটি ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নাজনীন আক্তারের লাশ। তার স্বামী সাকিব হোসেন জানিয়েছেন- ‘ভিক্ষুকের ছেলে’ বলে গালি দেয়ায় ক্ষোভে স্ত্রীকে হত্যা করেছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে নাজনীন আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার সাকিবের বাবার ভাড়া বাড়ির সেপটিক ট্যাংকি থেকে ওড়না ও শরীরের চামড়ার কিছু অংশ উদ্ধার করলেও লাশের সন্ধান পায়নি পুলিশ।
ফেসবুকের মাধ্যমে বগুড়া বগুড়া সদরের সাবগ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে কলেজছাত্রী নাজনীন আক্তারের পরিচয় হয় সাকিব হোসেনের। ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নাজনীনকে বিয়ে করে সাকিব।
নাজনীনের ভাই আব্দুল আহাদ জানান, ২৪ মে বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরে বাবার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে সাকিব। ওইদিন স্বামীর দরিদ্রতা নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ও বালিশচাপা দিয়ে নাজনীনকে হত্যা করে লাশটি বাসার পাশে সেপটিক ট্যাকে ফেলে দেয় সে। দুইদিন নাজনীন ও সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় জিডি করে তার বাবা। এরই সূত্র ধরে সাকিবকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপরই নাজনীনের লাশ উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ।
সাকিব হোসেন জানান, নিজেকে অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের ছেলে পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ২৪ মে স্ত্রীকে নিয়ে গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে যান। সেখানে গিয়ে নাজনীন জানতে পারেন- সাকিবের বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যানচালক। তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। ওই সময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে নাজনীন তার স্বামী সাকিবকে ভিক্ষুকের ছেলে বলে গালি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে ঘরের পেছনের সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করে বগুড়ায় কর্মস্থলে যোগ দেন সাকিব।
সোমবার বরিশালের বাবুগঞ্জের নতুন চরজাহাপুর গ্রামে সাকিবের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। মঙ্গলবার পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরের হরহর গ্রামে সাকিবের বাবা করিম হাওলাদারের ভাড়া বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। ওইদিন বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি ওড়না এবং শরীরের চামড়ার অংশবিশেষ উদ্ধার হয়। বুধবার নাজনীনের লাশ খুঁজে পায় পুলিশ।
গৌরনদী থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় নাজনীনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- সেটা নাজনীনেরই লাশ। তার বাবা-মাকে বরিশালে আসতে বলা হয়েছে। আসামি সাকিবকে বগুড়ায় নিয়ে গেছে পুলিশ। বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply